একজন তামিম ইকবালের বিদায় !

in #hive-190212last year

বাংলাদেশের ক্রীড়াক্ষেত্রের দিকে তাকালে সবসময় একটাই অর্জন বেশ বড় পরিসরে চোখে পড়ে - ক্রিকেট। ক্রিকেট, নিঃসন্দেহে আমাদের মতো হাজারো ক্রীড়াপ্রেমীদের জন্য একটা আবেগের নাম, ভালোবাসার নাম, নির্ঘুম রাত বিজয়ের লাল সবুজের আশা ভরসার নাম। বিশ্ব দরবারে এ ছোট্ট ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের দেশটার পতাকার জয়রাজটীকার এক উপলক্ষের নাম। বিশ বছরের অল্প সময়ের মধ্যে দেশীয় গন্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে মানুষের মনে জায়গা করে নেয়ার সুযোগ বোধহয় ক্রিকেটই পেয়েছে।

একটা সময় ছিল যখন ফুটবলের জয়জয়কার ছিল, মানুষ আবাহনী মোহামেডান নিয়ে আড্ডা জমাতো, সেই সোনালী আশির দশকের দিনে যখন সাদাকালো টিভিতে দেখা যেত বিদেশী খেলোয়াড়দের আনাগোনা, এখন সে দিন চলে গেছে ক্রিকেট সে জায়গাটা দখল করে নিয়েছে। স্বদেশী ক্রিকেটের আজকের যে অবস্থান আমরা দেখতে পাই, তাতে কিছু খেলোয়াড়দের অবদান কেউ ভুলতে পারবে না সহজে।তারা হচ্ছে পঞ্চপান্ডব - বাংলাদেশের ক্রিকেটের যত মহীয়ান অর্জন, যত সুখ দুঃখ, হাসিকান্না, অর্জন-বিসর্জন তার সিংহভাগই তাদের হাত ধরে।

Source

পঞ্চপান্ডবদের একজন ওপেনার ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। যার ১৬ বছরের ক্রিকেট জীবনের সমাপ্তি এসে পড়েছে আজ। খুব ঘটা করে অবসরের ঘোষনা দেয়া আর অশ্রুজলে বিদায় জানানোর ঘন্টা যখন বাজলো - এ বছরের আসন্ন বিশ্বকাপের পর্দা ওঠার যখন মাসখানেক সময় বাকি রইলো। কত শত ম্যাচ যে তামিম ইকবালের ব্যাটে ভর করে বাংলাদেশ জিতলো আর জাতীয় দুর্দিনে দেশীয় ক্রিকেটকে সামনের সারিতে নিয়ে যাওয়ার সংগ্রামে অগ্রবর্তী হওয়ার গল্প - তার চরিত্রবিন্যাসে তামিম ইকবাল অবিস্মরণীয়, বরণীয়।

আমি ব্যাক্তিগতভাবে কখনোই চাই না, অন্তত দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ কেউ তামিম ইকবালদের মতো বিদায় নেয। যারা দেশের পতাকা বিশ্ব দরবারে সম্মানিত করে, তারা ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ,নৈতিক স্ফলিত বোর্ড কর্মকর্তাদের আক্রোশের শিকার হয়ে বিদায় নিয়ে যাক। যখন ক্রিকেটের ক জ্ঞান না জানা, চাচামামাখালুর সুপারিশকে পু্জি করে ক্রিকেট বোর্ড পরিচালনার অনুমতি পায়, তখন মূল্যবানকে মূল্য দিতে শিখবে না - এটা তো জানা কথা৷

দেশের মিডিয়া, দর্শকসমাজ খেলোয়াড়দের ব্যার্থতার দিনে বিষোদগার করবে, জয়ের দিনে কোলে তুলে জয়মাল্য পরাবে - এটা তো বাঙালি আত্নার চিরায়ত নিয়ম। বোধ করি, বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা সেটা ভালো বুঝে এসেছে ্,এবং সব ধরনের সমালোচনা সহ্য করে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। এশিয়া কাপে ২ বলে ১ রান দরকার, সেটা ছক্কা মেরে হিরো হতে চাওয়া মুশফিক মাহমুদউল্লাহরা যখন নিতে পারে নি - মিডিয়া আর অতি আবেগী বাঙালি দর্শকসমাজের কতিপয় দর্শক খুব সহজভাবে নেয় নি।

দেখেছি, লাগামহীন বিষোদগার, কটুক্তি, সমালোচনার বিষবাষ্প,গালাগাল আর টিম সিলেক্টরদের একহাত নেয়া - কম হয়নি। ড্রেসিং রুমে অঘোরে অশ্রুবর্ষণ দেখতে পাই না আমরা। মনে পড়ে যায় বিখ্যাত এ দেশীয় গায়ক জেমসের সেই বিখ্যাত গানটি, যার মর্মের ধ্বনি -প্রতিধ্বনি বাংলার আকাশ বাতাসকে অনুরণিত করে,

হাসতে দেখো, গাইতে দেখো, অনেক কথায় মুখর আমায় দেখো, দেখোনা হাসিশেষে নীরবতা..

আজ আমার সেই কৈশোর বয়সের প্রিয় খেলোয়াড়, বাংলার ওপেনিং ব্যারিংস্তম্ভের বাতিঘর, হাজারো তরুন ব্যাট হাতে খেলতো নামা খেলোয়াড়দের অনুপ্রেরণার অশ্রুভরা বিদায় আরতি আর দীর্ঘ ১৬ বছরের ক্রিকেট জীবনের ইতি টানার বেদনাবিধুর হুতাশ দেখে কখন জানি নিজের চোখের কোনে জ্বল, ছলছলে হৃদয় নিংরানো জ্বালা ধরে গেল।
কত শত ক্রীড়াবিদকে অবসর নিতে দেখলাম, এতটুকু আক্ষেপ, এতটুকু গ্লানি, হতাশা আর অনুভব করি নি।

Source

এদেশের ক্রিকেটের অর্জনের পেছনে যার নাম বাঁধা, সে যদি খানিকটা হতাশা রেখে চলে যায়, তার বিদায়ের অপূর্ণতা ধরে রাখার মতে হয় না। বিসিবি যদি কখনো নিজেদের সেই অবস্থান ভবিষ্যতে কখনো পরিবর্তন করে,বোধহয় তার কলঙ্ক আর গ্লানি কখনো মুছবে না। পঞ্চপান্ডবরা একসময় নিজেদের বয়সের ভার অনুভব করবে, একে একে সবাই বিদায় নিবে, কিন্তু স্মৃতি মুছতে পারবে না।

বোর্ড হয়তো চেষ্টা করবে তাকে ক্রিকেটে ফেরাতে আবার, সাধারম মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের মতো বলে যাবে, কিন্তু যদি তামিম ইকবাল তার অবসরের সিদ্ধান্তে অটল থাকে তাহলে সামনের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের একজন উজ্জল নক্ষত্র মুছে যাবে। তবু আশা রাখি, বাংলাদেশ ক্রিকেট সামনের দিকে এগিয়ে যাক, নিয়ে আসুক আশার আলো, আনন্দের অশ্রুবারি, সে অশ্রু নয় - যেভাবে তামিম, মাহমুদউল্লাহরা অপূর্ণ ক্যারিয়ার রেখে বিদায় নেয়।

চলো বাংলাদেশ,চলো বিশ্ব উঠানে চলো আবার, চলো বিজয়ের গানে গানে..

Sort:  

আমি এখনো এটা মে্নে নিতে পারতেছিনা। তামিম তো এতো সহজে হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো প্লেয়ার না। সোনালি দিনগুলেো আস্তে আস্তে অতিত হয়ে যাচ্ছে !

তামিমের হঠাৎ করে বিদায় নেয়াটার পেছনে নিশ্চয়ই কোন রহস্য আছে যেটা সে এখনই বলতে চায় না৷ তবে, ক্রিকেট বোর্ডের যে এখানে সংশ্লিষ্টতা আছে, সময় সময় সাকিব,মুশফিক, মাশরাফিদের মনোমালিন্য, চাপা ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে অতীতে, তারই পুনরাবৃত্তি হয়তো অবসরের এই ঘটনা।

যাহোক, বাংলাদেশ দলের জন্য শুভকামনা! 👍💚