আমিতো প্রায়ই বলি, রোকেয়া আমাদের ঘরের বাইরে বের করলো বটে, কিন্তু বাইরের যে চরমপন্থী সমাজ ব্যবস্থা, যে বিরূপতা চারপাশে, এক নারী দেখলেই দূর দূর ছাই-ছাই, নয়তো ফায়দা নেয়া চাই... এই গোটা একটা সমাজ ব্যবস্থার গোঁড়ামি, ভণ্ডামি, জোচ্চুরি, বৈরিতা এসবের বিরুদ্ধাচরণ করতে যে হবে তাতো কেউ শেখাবেনা।
তার চেয়েও বড়ো কথা, প্রতিপক্ষ গোটা একটা পুরুষ সম্প্রদায় যখন এর বিরুদ্ধে, তখন
সে সমাজে এই ভীত সন্ত্রস্ত নারী একেতো ঘরের ভেতরে থেকে বাইরের আঁট-ঘাট চেনেনি, তারউপর এইরকম আরাম-দায়ক ঘর ছেড়ে বাইরের বৈরী-বলয়ে দেয়ার নানান অজানা ভয়, শংকা, হতাশা, দুরাশা ইত্যাদি ইত্যাদি মিলিয়ে, কেবল স্বাধীনতার প্রলোভন খুব একটা সুবিধা করতে পারছেনা।
যে নারী সব ঠেলে এগিয়ে যাচ্ছে, সুবিধা করে তেলাপোকার মোট টিকিয়া যাইতেছে, তাকে একঘরে করে এ সমাজ দৃষ্টান্ত তৈরী করছে, ভয় দেখাচ্ছে যে, "ওহে বোকা নারী, বাইরে এসোনা, এসে কেবল লসই, লাভ কোথাও আসলে নাই। স্বাধীনতার মূলায় আসলে কোনো স্বাদ নেই, কেবলই তিক্ততা। তার চেয়ে তুমি থাকো অন্তঃপুরে, দুধে ভাতে।"
এখন সক্কলের প্রধান মাথাব্যথার বিষয় (একমাত্র আমি ছাড়া অবশই) আমার এই উচ্ছন্নে যাওয়া জীবন নিয়ে আমার আপাতত কোনো মাথাব্যথা না থাকার কারণ।
অনেক তত্ত্ব, তথ্য, সূত্রের মাঝে আমার সূফীদের দর্শনটা বেশ মনঃপুত লাগে। আর দৈনন্দিন জীবনের বাজে সময়টা করতে সর্বোপরি আরেকটা যেটা কাজে লাগে তা হলো কোয়ান্টাম ফিজিক্সের পজিটিভিটির থিওরিটা। যদিও ঠেলায় পড়লে এসব আসলে মানসিক শান্তি যোগানের কাজে খুব একটা একটা কাজে লাগেনা কিন্তু পরীক্ষা করে দেখলাম (জীবন থেকে নেয়া) উপযুক্ত চর্চার মাধ্যমে এগুলাকে আসলেও জীবনের চালিকাশক্তি হিসাবে প্রয়োগ করা যায়।
বয়ো-বৃদ্ধরা ভয় দেখায় যে, একা থাকা যায়না একটা নির্দিষ্ট সময় পরে, কিংবা কে দেখবে আমরা না থাকলে ইত্যাদি ইত্যাদি।
এতবার এত জনের কাছে শুনে শুনে আসলেই একটা সময় শঙ্কা কাজ করেছিলো। প্রায়ই ভাবতাম আসলেইতো, এ দেশতো আমাকে একা চলতে, একা বইতে, একা বাইতে এবং সর্বোপরি একা বৃদ্ধ হতে শেখায়নি।
বিসর্জনের জয়গান গেয়ে হলেও, বেলা শেষে পুরুষতন্ত্রের নিরাপদ আশ্রয়ের উপর নির্ভর করতেই শিখিয়েছে।
আমি বরাবরই বেশ স্ট্রং-উইল্ড ছিলাম। এমনকি সাকিবও আজকাল এইটা নিয়ে মস্করা করে "আপনিতো একাই সব সব পারেন তাইনা, হেল্পতো লাগবেনা!" এখন এই একা না পেরে উপায় ছিলোনা। একা না পারবার লাক্সারি ছিলোনা, নাই। সবটা একা হাতে সামলাতে সামলাতে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে, একা না করে উপায় ছিলোনা, নাই। কিন্তু ক্লান্ততো লাগেই, বয়সের সাথে সংকল্পে ভার যোগ হয়। শংকা হয়, নির্ভরতার প্রবল ইচ্ছে হয়।
তারপর মিথিলার সাথে কথা হলো। মনে হলো আমার পাজলের যে একটা টুকরো মিসিং ছিল সেটা আমি টেরই পাইনি। এজন্যই সব পেরেও, কোথাও একটা না পারার শংকা আঁচড় কেটে যাচ্ছিলো বারবার। ওর সাথে কথা হবার পর সেই পাজলের টুকরোটা খুঁজে পেলাম যেনো।
স্বপ্ন আর দায়িত্বের ভারে নুয়ে যাওয়া এ জীবনকে বহুদিন পর অনেক হালকা মনে হচ্ছে।
All the contents are mine until mentioned otherwise.