My midjourney art.
"অহংকার পতনের মূল" এটা আমাদের সমাজে প্রচলিত একটি কথা। এটি একটি সত্য কথা নৈতিক মূল্যবোধের দিক থেকে এমনকি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও।
আমাদের সমাজে অহংকার আজ শ্যাওলার মতো ছড়িয়ে পড়ছে, ক্রমাগত স্রোতের প্রবাহের মতো বিস্তৃত হচ্ছে সর্বত্র। নিজেকে জাহির করার প্রচণ্ড প্রতিযোগিতায় আমরা মেতে উঠেছি। স্বল্প অর্জনকে আরও বেশি করে ফুটিয়ে তোলা যেন সাধারণ স্বভাব আমাদের। সম্পদের দাপটে গরিবের ওপর জুলুমণ্ডঅত্যাচার করা যেন প্রতিদিনের ঘটনা। আমি যেখানে বসবাস করি, সেই গ্রামটি অহংকারী মানুষে ভরপুর। আমি সাধারণত অন্যদের নিয়ে সমালোচনা করি, আমি পছন্দ করি না সমালোচনা করা বা সমালোচক। আমি আমার জীবনকে নিজের মতে এবং আমার পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী চালাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।
আজকে শুক্রবার জুমার নামাজের দিন। এটা আমার কাছে অন্তত সপ্তাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। সকালে উঠেই নাশতা করে গোসল সেরে নামাজের প্রস্তুতি নিই এবং মসজিদে যাই। ছোটবাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্ক সবাই মসজিদে সমাগত হয়েছে। কিন্তু সেখানে পদে পদে বর্ণবাদ দেখা যায়। যারা প্রভাবশালী তারা সর্ব প্রথম কাতারে দাড়াবে এবং সেই ক্রমানুসারে অন্যরা দাড়াবে এবং নামাজ আদায় করবে। এটা আমার কাছে পছন্দ হয়নি। আমি চিন্তা করছিলাম মানুষ এতো অহংকার করে কিসের জন্য? তাদের প্রভাব আর সম্পদের জন্য? ভাবতেছি, হঠাৎ পিছন থেকে ডাক শুনতে পেলাম "সরে দাড়াও"। আমি কিছু না বুঝেই জায়গা করে দিলাম যাওয়ার জন্য, হঠাৎ দেখলাম বেশ কয়েকজন লোক পিছনে তাদের মধ্যে একজন হলো সাবেক মন্ত্রী আছে, তাকে সর্ব সামনে কাতারে যাওয়ার জন্য লোকেরা সরে দাড়াচ্ছে।
আমার কাছে এই ব্যাপার গুলা কেমন অদ্ভুত লাগে, এটা ভেবেই যে মসজিদেও কেন তারা তাদের প্রভাব দেখায়। ঘর থেকে বের হলেই দেশজুড়ে সুবিধাভোগীদের দাপটে অতিষ্ঠ মানুষ সেখানে মসজিদে এসেও এসব সহ্য করতে হয়। তারা অসহায় মানুষদের পায়ের নিচে ফেলে মারবে। মসজিদের একপাশে গিয়ে বসলাম আর চারিদিকে তাকাচ্ছিলাম সবাই খুব মনোযোগের সহিত ইমাম সাহেবকে শুনছিলো, আমিও মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা করলাম, "তিনি বলছিলেন গিবত করা হারাম গুনাহ করার মতোই গুনাহ, গিবত করা এবং অন্য কোন হারাম কাজ করা একই" এসব ছাড়াও আরো অনেক কিছুই বলছিলো। একটা সময় তিনি আরেকটা টপিকে গেলো এবং বলছিলো "আপনাদের উচিত সন্তানদের মক্তব,মাদরাসায় লেখাপড়া করানো, কিন্তু আপনারা কি করেন সকাল ৭টায় ঘুম থেকে তাদের তুলে কিন্ডারগার্ডেনে পাঠান"।
সত্যি বলতে লাইনটি শোনার পরে আমার মাথায় সবচেয়ে প্রথম যে কথাটি আসলো তা হলো, ওনার দুইটা সন্তানকেই স্কুলে পড়াচ্ছেন, এবং সকাল ৭টায় তিনি নিজে গিয়ে দিয়ে আসেন। আমি সবার মতোই শুনে যাচ্ছিলাম উনি কি বলে।
নামাজ শেষের মোনাজাত শুরু হলো! মোনাজাতের প্রথমের ১ মিনিট কিছু দোয়া-সুরাহ-আয়াত পাঠ করলো, তারপর থেকে শেষ পর্যন্ত শুধু সাবেক মন্ত্রী সাহেবের সুস্থতা কামনা করেছে, আক্ষরিক অর্থে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মোনাজাতে শুধু মাত্র মন্ত্রী সাহেব ছিলো। এটা প্রতি জুমার নামাজেই হয়, কারন তিনি প্রতি সপ্তাহে শুক্রবারে এখানে নামাজ আদায় করতে আসে।