টিক, টিক, টিক, টিক। ঘড়ির কাঁটা, সময়ের খোঁটা আজকে ভাড়ি চড়া। বাতাসের হুংকার, আজকে সে করেই ছাড়বে সব চুরমার। আকাশের গর্জন, প্রকৃতি আজ বোধহয় মেতেছে এই ভাবনায় করবে কিছু নিয়মের বাইরে অর্জন। ভয়ে চাঁদটাও লুকিয়ে আছে কালো মেঘের আড়ালে। বুঝতেছিনা কিছুতেই যাব কিভাবে বাইরে। বাইরে ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে, আম্মু আর ছোট ভাই কি জানি বলেছে, তার পরেও ঘড়ির কাটার ওই টিক, টিক শব্দটা; জানিনা কেন শুনতে পাচ্ছি! মনে হচ্ছে ঘড়িটা ইচ্ছা করে আমার কানে চিৎকার করে বলছে সময় তো অনেক হল! সময় তো অনেক হলো! প্রতিটা সেকেন্ড এর হিসাব দিচ্ছে। কি আজব ঘড়ি আবার আমার সাথে যোগাযোগ করেছে! আসলেই অদ্ভুত! কিন্তু পরিস্থিতি টা আরো অদ্ভুত।
ঘড়ির কাটায় এগারোটা বেজে সাতচল্লিশ মিনিট, ভালোই রাত হয়ে গেছে কিন্তু সারাদিনে বাবার কোন খবর নেই। অস্বাভাবিক কিছু না এমন দেরি বাবার মাঝে মধ্যেই হয় কিন্তু দেরি হলে সব সময় আগে থেকে জানিয়ে রাখে। আম্মুর আজকে বিকালেও আব্বুর সাথে কথা হয়েছে, বলেছে এশার নামাজ পড়েই চলে আসবে। হ্যাঁ সব সময় বললেই চলে আসেনা; মাঝে মধ্যে দেরি হয়ে যায়, অস্বাভাবিক কিছু না। তবে আজকে দেরিটা অনেক বেশি, এটাও তেমন অস্বাভাবিক কিছু না এমন আগেও হয়েছে। তাহলে দুশ্চিন্তাটা কই? একটা ফোন দিলেই তো হচ্ছে। হ্যাঁ, ঠিক তাই। আর সমস্যাটা এখানেই মিসড কল হয়ে গেছে সাতাশটা!
নিজের করা ছবি
বাইরে যেহেতু ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে হয়ত বা কোথাও আটকে আছে। হ্যাঁ, ঠিক তাই। কিন্তু তাই বলে ফোন কেন ধরবে না! আর বলেছে তো তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবে। দুশ্চিন্তা হলে মাথা ঠিকমত কাজ করেনা, কোথায়, কোথায় থাকতে পারে ফোন দিয়ে জানলেও তো হয়। ওসব কী আর বাদ রেখেছি? দুশ্চিন্তা তো ওখানেই! না হলে তো কোন সমস্যাই ছিল না।
আব্বুর অ্যাসিস্ট্যান্ট কে ফোন দিয়ে জানতে পেরেছি অফিস থেকে বের হয়েছে সন্ধ্যায়! তার কাছ থেকে তদারকি করে আরো জানতে পেরেছি আজকে কোন কাজ বা মিটিং কোন কিছুই নেই, বরং আজকে সব কাজ আগেই শেষ হয়ে গেছে। এজন্যই তো দুশ্চিন্তিত এত বেশি। তার উপরে আম্মুর প্রেসার, নতুন করে বলার তো আর কিছু নেই অতিরিক্ত চিন্তা করাটা আম্মুর এক ধরনের বাজে নেশা। বাসায় আম্মু, বাইরে আব্বু, তার মধ্যে প্রকৃতি নারাজ। এই বৃষ্টির মনে হয় আজকে শান্ত হওয়ার কোন পরিকল্পনাই নেই।
আব্বুর অফিসের কাছাকাছি আমার বড় চাচার বাসা সেখানেও খবর নিয়েও দেখেছি ফলাফল একই। বৃষ্টি আর হতাশার কোন কমতি নেই আজকে। অফিসের আশেপাশে আব্বুর একটা বন্ধু আছে বাদল আঙ্কেল, তাকে জানালাম তিনিও হতাশ করলেন। তবে স্বস্তি ছিল যে তিনিও আরও বন্ধু বান্ধব থেকে খবর নিচ্ছিলেন। হতাশার আঁচল ওই স্বস্তিকে ঢেকে দিতে বিন্দু মাত্র দ্বিধাবোধ করেনি। সকল জিজ্ঞাসাবাদের ফলাফল একটাই ব্যর্থতা।
আমাদের এলাকায় নামডাক ভালো, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল যে আমাদের বাসার মানুষ জনকে চিনেনা । অনেক ফোন কল আর তল্লাশির পর জানা গেল বাবা আমাদের এলাকার মসজিদে এশারের নামাজ আদায় করেছেন। বৃষ্টির কারণে নামাজের সাড়ি আজকে বেশি বড় না হওয়ায় এই তথ্যটা জানাও খুব কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে। যাক এবার তাহলে অন্তত আম্মুর দুশ্চিন্তা কিছুটা হলেও কমেছে। এলাকায় আব্বুর যাওয়ার জায়গা হাতেগোনা চার পাঁচেক। মসজিদের সামনের চায়ের দোকান অথবা বাসার সামনের অফিস তা না হলে বড়জোর বাজারে তার দুই বন্ধুর অফিস।
সময় আর দুশ্চিন্তা বেড়েই চলেছে। আকাশের গর্জনে নিখোঁজ চাঁদটাও সারা দিচ্ছে। ভেজা রাস্তায় ঠান্ডা বাতাসে, বাবার সন্ধানের কোন আবাস পাচ্ছিলামই না। সময়ের খোঁটা উত্তরের সন্ধানে মস্তিস্ককে বারংবার খুব জ্বালাচ্ছে। রাতের আধারও আমার অশান্ত মনের অদ্ভুত চিন্তার কাছে আজকে আলোড়িত।
ক্রিং, ক্রিং করে ফোনটা বাজছে; আবারো আম্মু; প্রতি মিনিটে তিনটা করে কল দিচ্ছে, প্রতি বারের মতোই এবারও তাকে আমার কাছ থেকে ব্যর্থতার বার্তা মেনে নিতে হবে। চায়ের দোকান বা কোন অফিসে দেখা মেলেনি বাবার। শুধু তাই নয় এখানে আজকে আসার বিন্দু মাত্র হদিস ও পাইনি। কিন্তু আম্মুর প্রশ্ন আমার কানে চিৎকার করে নি এবার। তার তিন শব্দ যেন আমি তিনশ জনম ধরে শোনার প্রতীক্ষায় ছিলাম। বাবা চলে এসেছে।
রূপকথার মত দৌড়ে-দৌড়ে বাসায় যাইনি। খুশিতে একটা কোকা-কোলা না খেলে আমার আবার রাতে ঘুম হবেনা। বাসায় গিয়ে জানতে পারলাম বাবা আমার নামাজ পড়ে হুজুরের সাথে চলে গিয়েছিল কেরানীগঞ্জ ওয়াজ শুনতে। খুব বড় বক্তা নাকি এসেছিল। নামাজের সময় মোবাইল সাইলেন্ট করেছিল তার রিভার্স করা হয়নি।
মজার বিষয় হচ্ছে যত বড় বক্তাই হোক, যত জ্ঞানীই হোক, আমার আম্মুর হিংস্রতা থেকে ওইদিন রক্ষা পাওয়ার উপায় শিখাতে পারে নি।
এরকম পরিস্থিতি আপনার পরিবারে ও হতে পারে তো এই পরিস্থিতিকে কিভাবে হ্যান্ডেল করবেন তা জানতে চোখ রাখুন আমার ব্লগে।
আবার স্ত্রী থেকে বাঁচার উপায় মনে করেন না 🙄🤣। ওটার কোন বিকল্প নেই। কেউ যাতে নিখোঁজ না হয় তার সমাধান 😊।